এবার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের জানাজার সময় ঘটে বিপত্তি। জানাজাস্থলে সব পাওনাদার এসে ভিড় করেন। এ সময় বাবার পাওনাদারদের দেখে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান তার সন্তানরা। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) শরণখোলা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বুধবার (১২ জুলাই) সকালে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে মারা যান ওই ব্যক্তি।
এদিকে মৃত আবদুল আজিজ মৃধা (৭০) শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তাফালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন উপজেলা সদরের পাঁচ রাস্তা এলাকায়। প্রায় ছয় মাস ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তার মরদেহ পড়েছিল উপজেলা সদরের রায়েন্দা কেন্দ্রীয় মসজিদের অজুখানার পাশে। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিবারের লোকদের খুঁজে এনে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা সম্পন্ন করে মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহতের প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমান বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানদের চাপে বাবা আমাদের কোনো খোঁজ নিতেন না। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর কৌশলে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করে দ্বিতীয় স্ত্রী- সন্তানরা। কিন্ত বাবার কোনো দেনা শোধ করেনি তারা। জানাজার সময় পাঁচজন পাওনাদার এসে টাকা দাবি করলে, দ্বিতীয় ঘরের সন্তানরা বাবার মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়।
এ অবস্থায় বেওয়ারিশ হিসেবে বাবার মরদেহ দাফনের জন্য স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ জন্য উপজেলার মালিয়া আল-ফালাহ্ মাদরাসার কবরস্থানে তার কবর প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের মধ্যস্থতায় পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে আশ্বস্ত করার পর জানাজা সম্পন্ন হয়। বাবার মরদেহ আমাদের গ্রামের বাড়িতে দাফনের ব্যবস্থা করি।
এ বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারের লোক ও পাওনাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে মরদেহের জানাজা শেষে আজিজ মাস্টারের প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমানের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত জমি ও অর্থ উদ্ধার করে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
এদিকে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তাৎক্ষণিক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধান করে মরদেহের জানাজা ও দাফনের জন্য বলা হয়। পাওনাদাররা যাতে তাদের টাকা পেতে পারেন সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।